পাঁচ বছর আগে ঘটে যাওয়া চট্টগ্রামের মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার বাদী ছিলেন স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। এবার স্বামীই হলেন আসামী।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে এক কক্সবাজারে কর্মরত অবস্থায় গায়ত্রী অমর শিং নামে এক এনজিও কর্মীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে বাবুল আক্তার। বিষয়টি জানতে পারে মিতু সেই থেকেই পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। আর এসব কারণেই বাবুল আক্তার নিজেই স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুনের পরিকল্পনা করেন। স্বামী বাবুলের নির্দেশে খুন করা হয় মিতুকে।
গত পাঁচ বছর ধরে চলছিলো এই মামলার তদন্ত। নানা তথ্য প্রমাণ অনুসন্ধানে গিয়ে পিবিআই জানতে পারে স্ত্রী মিতু হত্যার সঙ্গে মামলার বাদী স্বামী বাবুল আক্তারই জড়িত। ঘটনা মোড় নেয় অন্য দিকে। মামলা হয় তার নামে। কিন্তু যার সাথে পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে হত্যা কে সেই গায়েত্রী?
পুলিশের তদন্ত এবং মিতুর বাবার কাছ থেকে জানা গেছে সেই এনজিও কর্মী গায়েত্রীর পরিচয়। তার পুরো নাম গায়েত্রী অমর সিংহ। বর্তমানে সুইজারল্যান্ড অথবা পূর্ব আফ্রিকার কোনো দেশে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের প্রটেকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত গায়েত্রী। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। মামলার বিষয়ে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গায়েত্রী অমর সিংহ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের ফিল্ড অফিসার হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত ছিলেন। তখনই তার সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পর্ক হয়। ব্যক্তিগত জীবনে গায়েত্রী বিবাহিত এবং তার একটি ছেলে রয়েছে।
মিতুর বাবার করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালে ইউএনসিসিআর এর কর্মী গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। এই নিয়ে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় মিতুর সঙ্গে। কলহের সময় মিতুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন বাবুল। এরই মধ্যে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সুদানে জাতিসংঘ শান্তিমিশনে সুদানে ছিলেন বাবুল আক্তার। এই সময় বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোনটি চট্টগ্রামের বাসায় ছিল। ওই মোবাইল ফোনে মোট ২৯ বার ম্যাসেজ দেন গায়ত্রী অমর সিং।
সর্বশেষ মিতু হত্যার কয়েকমাস আগে বাবুল একটি ট্রেনিংয়ে থাকা অবস্থায় গায়েত্রী তার বাসায় দুইটি বই উপহার পাঠান। বই দুটির নাম-তালিবান ও বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট। তালিবান বইটির ৩ নম্বর পৃষ্ঠায় গায়েত্রী নিজ হাতে একটি বার্তা লিখে দেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমাদের ভালো স্মৃতিগুলো অটুট রাখতে তোমার জন্য এই উপহার। আশা করি এই উপহার আমাদের বন্ধনকে চিরস্থায়ী করবে। ভালোবাসি তোমাকে, গায়েত্রী।’
একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় গায়েত্রী তাদের প্রথম দেখা, প্রথম একসঙ্গে কাজ করা, প্রথম কাছে আসা, মারমেইড হোটেলে ঘোরাফেরা, রামু মন্দিরে প্রার্থনা, রামুর রাবার বাগানে ঘোরাফেরা এবং চকরিয়ায় রাতে সমুদ্রের পাশ দিয়ে হাঁটা ইত্যাদি স্মৃতির কথা উল্লেখ ছিল। এছাড়াও বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট নামের বইয়ের ২য় পাতায় গায়েত্রীর নিজ হাতে ‘তোমার ভালোবাসার গায়েত্রী’। সূত্র: কালের কণ্ঠ।